সোমবার ২৬ মে ২০২৫

সম্পূর্ণ খবর

আইপিএল ২০২৫ | বৈভবে হতাশ সৌরভ, নাটকীয় ম্যাচে রাসেল ঝড়ে প্লে অফের লড়াইয়ে টিকে থাকল কেকেআর

Sampurna Chakraborty | ০৪ মে ২০২৫ ০০ : ৫৭Kaushik Roy


সম্পূর্ণা চক্রবর্তী

 

ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় ৫.১৫ মিনিট। রাজস্থানের ইনিংস শুরু হওয়ার মুখে। সিএবিতে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ির দিকে হাঁটা মারলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। মাঝে ভক্তদের আবদারে তুললেন কয়েকটা সেলফি। তারই মধ্যে এক ক্ষুদে সমর্থক ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে দাদাকে। ছিল সংবাদমাধ্যমের ভিড়ও। তবে সৌরভের হাতে একেবারেই সময় নেই। রীতিমত হনহন করে হাঁটা মারলেন।

যেতে যেতে সৌরভ বলেন, 'বাচ্চাটার খেলাটা একটু দেখে আসি, যদি আউট হয়ে যায়।' এটা বলে সবে মাত্র বক্সে প্রবেশ করেছেন। তার দু'মিনিটের মধ্যেই আউট বৈভব সূর্যবংশী। হতাশ ইডেন। ১৪ বছরের বিস্ময় বালকের ব্যাটিং দেখতে এসেছিলেন সুব্রত দত্ত, বিশ্বরূপ দে সহ আরও অনেকে। তাঁরাও হতাশ। বাবা-মায়ের উপস্থিতিতে ব্যর্থ সূর্যবংশী। দুরন্ত শতরানের পরের দুই ইনিংসে ২ এবং ৪। তবে রবিবাসরীয় সন্ধেয় নাইটদের প্রাপ্তি আন্দ্রে রাসেল। কেকেআরের জয়ের কারিগর ড্রে রাস। 

রবিবার ইডেনে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অজিঙ্ক রাহানে। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারের শেষে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ২০৬ রান তোলে কেকেআর। জবাবে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রানে থামে রাজস্থান রয়্যালস। নাটকীয় ম্যাচে মাত্র ১ রানে জয় নাইটদের। শেষ বলে ৩ রান প্রয়োজন ছিল। আরও একটা সুপার ওভার হতে পারত।

কিন্তু দু'রান নিতে গিয়ে রান আউট হন জোফ্রা আর্চার। আপ্রাণ চেষ্টা করেও দলকে জেতাতে পারেননি রিয়ান পরাগ। বিফলে যায় তাঁর ৯৫ রান। রাজস্থানের বিরুদ্ধে জয়ে ১১ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট কেকেআরের। প্লে অফের লড়াইয়ে টিকে থাকলেন অজিঙ্ক রাহানেরা। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে। এদিন রাসেলের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। ঝড়-বৃষ্টির জন্য আগেরদিন পাঞ্জাব ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছে।

এদিনও কালবৈশাখীর পূর্বাভাস ছিল। ঝড় উঠল, তবে সেটা তোলেন রাসেল। একটা সময় কেকেআরের রানরেট আটের কম ছিল। রহমানুল্লাহ গুরবাজ (৩৫), অজিঙ্ক রাহানে (৩০) এবং অঙ্গকৃষ রঘুবংশী (৪৪) রান পেলেও, বেশ কিছু বল নেন। কিন্তু ইডেনের মন্থর পিচে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন রাসেল। একলাফে বাড়িয়ে দেন রানরেট। ক্যারিবিয়ান তারকা ক্রিজে নামার আগে মনে হয়েছিল মেরেকেটে হয়তো দেড়শোর গণ্ডি পেরোবে নাইটরা। কিন্তু যাবতীয় অঙ্ক বদলে দেন রাসেল। 

পাওয়ার প্লের শেষে ৫৬ রানে ১ উইকেট ছিল কেকেআরের। ১০০ রানে পৌঁছতে ১২.২ ওভার নেয়। ১৭.২ ওভারে ১৫০। এরপরের ১৬ বলে ৫৬ রান। শেষ ৫ ওভারে ৮৫ রান। সৌজন্যে রাসেল। ২২ বলে অর্ধশতরান সম্পূর্ণ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা। শেষপর্যন্ত ২৫ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত। চলতি আইপিএলে প্রথম অর্ধশতরান। বিধ্বংসী ইনিংসে ছিল ৬টি ছয়, ৪টি চার। রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় রাজস্থান। চার মেরে শুরু করলেও দ্বিতীয় বলে আউট বৈভব সূর্যবংশী। উইকেট নেন আরেক বৈভব। ক্যাচ রাহানের। শূন্যতে ফেরেন কুণাল সিং রাঠোর। ৮ রানে ২ উইকেট হারায় রাজস্থান।

নিজের চেনা ছন্দে পাওয়া না গেলেও ২১ বলে ৩৪ রান করেন যশস্বী জয়সওয়াল। শূন্যতে ফেরেন ধ্রুব জুরেল এবং ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ৭১ রানে পাঁচ উইকেট হারায় রাজস্থান। মনে হয়েছিল ম্যাচ নাইটদের পকেটে। কিন্তু টানা হাফ ডজন ছয়ে রাহুল দ্রাবিড়ের দলকে ম্যাচে ফেরান রিয়ান পরাগ। ১৩তম ওভারে ৩২ রান। মঈন আলিকে পরপর পাঁচটা ছক্কা হাঁকান রাজস্থানের অধিনায়ক। পরের ওভারে বরুণ চক্রবর্তীর প্রথম বলেও ছয়। পরাগ এবং হেটমেয়ার জুটি রাজস্থানকে লড়াইয়ে ফেরায়। ৪৮ বলে ৯২ রানের পার্টনারশিপ।

ম্যাচটা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে হাতের নাগালে নিয়ে আসেন পরাগ। কিন্তু হেটমেয়ার (২৯) আউট হওয়ার পর চাপে পড়ে রাজস্থান। একমাত্র ভরসা ছিলেন পরাগ। কিন্তু নিজের শতরানের পাশাপাশি দলের জয়ও অধরা। ৪৫ বলে ৯৫ রানে আউট হন রাজস্থানের নেতা। দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব রাহানের। ১৮তম ওভারে ফের ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন হর্ষিত রানা। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২২ রান। সেখান থেকে শেষ ২ বলে ৯ রান দরকার ছিল। পঞ্চম বলে ছয় মারেন শুভম দুবে। শেষ বলে প্রয়োজন ৩ রান। কিন্তু তীরে এসে তরী ডোবে‌। দিল্লির পর আবার একটা হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে হার রাজস্থানের। শেষমেষ পচা শামুকে পা কাটেনি রাহানেদের। পরের ম্যাচে ঘরের মাঠে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে নামবে নাইটরা।


নানান খবর

সোশ্যাল মিডিয়া